চীনে উইঘুর মুসলিমদের উপর দমন-পীড়ন ও হুই মুসলিম জাতি

স্বাধীনতার পর থেকে চীন হচ্ছে অন্যতম দেশ, যারা কিনা বাংলাদেশের সামরিক ও অর্থনৈতিক উভয় দিক দিয়ে সহায়তা করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী চাইনিজ ও রাশিয়ান সামরিক অস্ত্র ব্যাবহার করে অভ্যস্ত। এছাড়াও দেশের বহু রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন মূলক নির্মাণের সাথে এই চীন ওতোপ্রোতো ভাবে জড়িত। এছাড়াও দেশের নৌবাহিনী হচ্ছে অন্যতম শক্তিশালী নৌবাহিনী। এই নৌবাহিনীর ৬টা ফ্রিগেটের সবগুলোই চীন ও রাশিয়ার থেকে আনা। এক কথায় দেশের উন্নয়নে চীন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আর স্বাধীনতার সময়কালের বন্ধু রাষ্ট্র ভারত করছে শোষকের ভূমিকা। যাইহোক, দেশের উন্নয়নে যতই ভূমিকা দেখাক চীন ও রাশিয়া, রোহিঙ্গা ইস্যুতে এই চীন ও রাশিয়া বাংলাদেশের বিরোধিতা করেছে। ভারত নিউট্রাল আর আমেরিকা সরাসরি সমর্থন দিয়েছে। -- ইদানীং কানাঘুঁষায় শুনতে পাচ্ছি বাংলাদেশ সামরিক দিক দিয়ে আমেরিকার উপর অনেকটাই নির্ভর করতে শুরু করেছে। তারা নাকি এপাচি অ্যাটাক হেলিপ্টারও অর্ডার করেছে। সাথে আছে "এ" গ্রেড মিসাইল। এসবই শোনা কথা! যাক, চীন আমাদের অনেক সহায়তা করছে, এটা একদম সত্য। তারা আমাদের নীরব বন্ধু! কিন্তু একজন মুসলিম হিসেবে তাদের অনেক আচরণেরই চরম বিরোধিতা করা লাগছে! বিশেষত নিরীহ উইঘুর মুসলিমদের প্রতি করা তাদের অমানুষিক নির্যাতন।
.
চীন তাদের দেশে থাকা উইঘুর মুসলিমদের উপর ধারণাতীত ভাবে অত্যাচারের স্টীম রোল চালাচ্ছে! কিছুদিন আগে দেখলাম নারীদের বন্ধ্যা করে দেয়া হচ্ছে, এছাড়াও বিবিসি সংবাদমাধ্যমের কাছে একজন মুসলিম বলেছেন বন্দিশিবিরে কাউকে ঠিকমতো ঘুমাতে দেয়া হয় না। কয়েক ঘণ্টা ধরে উপরে ঝুলিয়ে রেখে পেটানো হয়। কাঠ ও রবারের লাঠি দিয়ে বেধম প্রহার করা হয়। শক্ত তার দিয়ে বানানো চাবুক দিয়ে প্রহার করা হয়। সুই দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফুটানো হয়। যন্ত্রের সাহায্যে হাতে-পায়ের নখ উপড়ে ফেলা হয়। নখ উপড়ে ফেলার পূর্ টেবিলের ওপর অস্ত্র জাতীয় যন্ত্রপাতি রেখে ভয় দেখানো হয়। এসময় বন্ধীরা ভয়ে ও আতঙ্কে চিৎকার ছেঁছামেছি করতে থাকে। বিবিসির গবেষণায় উঠে এসেছে চীনের পশ্চিমাঞ্চলের জিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর মুসলিম শিশুদেরকে তাদের পরিবার থেকে আলাদা করে নেয়া হয়। এক্ষেত্রে জোরপূর্বক কোমলতি শিশুদেরকে তাদের মায়েদের কোল থেকে কেড়ে নিয়ে তাদের পরিবার থেকে দূরে রাখা হয়। এসব শিশুদেরকে মাতৃভাষার বিপরীতে আলাদা ভাষা শেখানো হচ্ছে। তাদের পিতার ধর্ম-বিশ্বাস শিশুদেরকে আলাদা ধর্মের দীক্ষা দেয়া হয়। বিবিসির প্রতিবেদন বলছে জিনজিয়াংয়ের প্রাপ্তবয়স্ক উইঘুর মুসলিমদের মধ্য থেকে সহস্রাধিক ব্যক্তিকে ক্যাম্পে আটকে রাখা হয়েছে। অনেকটা দ্রুততার সাথে বোর্ডিং স্কুল তৈরির কার্যক্রম চালানো হয় সেখানে। এরমধ্যে উইঘুর অধ্যুষিত একটি শহরের ৪ শতাধিককেরও বেশি শিশুর বাবা-মাকে বিভিন্ন ক্যাম্পে বন্দি করা হয়। নির্যাতিত নারী ও শিশুদের একটি অংশ তুরস্কে আশ্রয় নেয়। এরা তুরস্কের রাজধানী ইস্তাম্বুলের বড় একটি হলরুমে রয়েছেন। তাদের সাথে বিবিসির সাংবাদিক প্রতিনিধিদল কথা বলেছে। যাদের মধ্যে অনেকের সন্তান পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে চীনে বন্দি হয়ে গেছে। এদের একজন নারী তার সন্তানের ছবি দেখিয়ে বলেন, ‘সেখানে (চীনে) তাদের দেখাশোনা কে করছে জানি না। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন।’ তিন ছেলে ও এক মেয়ের ছবি দেখিয়ে আরেক মা বলেন, ‘আমি শুনেছি তাদের এক এতিমখানায় রাখা হয়েছে।’ পৃথক প্রশ্নে ৬০টির মতো আলাদা সাক্ষাতকারে শতাধিক শিশুর উধাও হওয়ার তথ্য ইস্তাম্বুলে আশ্রয় নেয়া নারীরা জানিয়েছেন। নিখোঁজ শিশুদের সবাই উইঘুর মুসলিম পরিবারের সন্তান ছিলো।
.
এতসব বর্বর নির্যাতনের কথা শুনে মনে হয়না এরা কারো বন্ধু হতে পারে। কিন্তু, দেশের স্বার্থে ভাবা লাগে। এবার হয়ত আর লাগবে না ইনশাআল্লাহ। যাক, একটা ব্যাপারে বলি..... এই চীনে উইঘুর মুসলিমদের পাশাপাশি আরো একটি জাতি-গোষ্ঠী আছে, তারাও মুসলিম। তাদের নাম হলো "হুই" উপজাতি। অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে, চীন সরকার কিন্তু হুই মুসলিম জাতির সাথে কিন্তু সাধারণ চীনা নাগরিক এর মতই ব্যাবহার করে। উইঘুর মুসলিমদের যেমন রাষ্ট্রীয় কোন অধিকারই নেই, ঠিক তেমনি হুই জাতির ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ বিপরীত। তারা রাষ্ট্রীয় সব সুযোগ সুবিধাই পায়, যেমনটা পায় সাধারণ চীনা নাগরিক। তাদের রয়েছে ঈদের ছুটি, তাদের রয়েছে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা। কিন্তু, উইঘুর দের সাথেই যত নির্যাতন! কিন্তু কেন?
.
মূল কারনটা হলো, উইঘুর মুসলিম জাতি চীন অধ্যুষিত শিনজিয়াং প্রদেশকে আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে প্রকাশ ঘটাতে চায়। এটাই মূল অপরাধ। আর তাই সুন্নী মতাদর্শবাদী উইঘুর মুসলিমদের চীন সরকার তাদের দেশের জন্য বিপদজনক মনে করে। অপর দিকে হুই মুসলিম জাতি হচ্ছে সুফি মতাদর্শবাদী। জানেন, উইঘুর আর হুই আলাদা মূলত কীসে?

➤ শুধু চীনেই নয়, সোভিয়েত ভেঙে সৃষ্ট মুসলিম দেশসমূহ, পাকিস্তান ও পাশ্চাত্যের কিছু দেশেও রয়েছে উইঘুর মুসলিমদের বাস। ওদিকে চীনা উইঘুরদের প্রায় ৯০ ভাগেরই বাস দেশটির উত্তর-পশ্চিমের শিনজিয়াং প্রদেশে। প্রদেশটির পুরো নামই ‘শিনজিয়াং উইঘুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল’। চোখের দেখাতেই উইঘুর আর মূলধারার হান চীনাদের আলাদা করা যায়। তফাত যেন অনেকটা রেড ইন্ডিয়ানদের সাথে ককেশানদের মতোই স্পষ্ট। শুধু নৃতাত্ত্বিকভাবেই নয়, তাদের ভাষাও আলাদা। উইঘুররা মূলত তুর্কিক ভাষায় কথা বলে, যা লেখা হয় আরবি হরফে। অন্যদিকে হুইদের বাস সমগ্র চীনজুড়ে। উইঘুরদের মতো হুইদেরও ‘নিজস্ব’ স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল আছে, যার নাম ‘নিংশিয়া’।
উইঘুরদের দুর্গতি ও ভৌগোলিকতার দায় মূলত কয়েকটা ব্যাপারকেই ধারনা করা হয়। মূলত চীনের পূর্বাংশকে ধরা হয় চীন তথা পৃথিবীর সবচেয়ে উর্বর কৃষিক্ষেত্রের একটি। সেই কৃষিক্ষেত্র যে নদীগুলোর ওপর নির্ভরশীল, তার সবগুলোরই উৎপত্তি তিব্বত প্রদেশে। শুধু কৃষির ক্ষতিই নয়, এই স্থানটি খোয়ালে সেটি এশিয়ায় ভারতের প্রভাব বাড়াতে পারে। এসব ভয় থেকেই অতি সতর্কতার সাথে তিব্বতিদের স্বাজাত্যবোধকে কঠোরভাবে দমন করে চীন সরকার। তিব্বতের মতোই আরেকটি অতি-নিয়ন্ত্রিত প্রদেশ হচ্ছে শিনজিয়াং। একে তো শিনজিয়াং আয়তনের দিক থেকে সবচেয়ে বড় প্রদেশ বলে চীন একে খোয়াতে চায় না। সেই সাথে ইউরোপ, আফ্রিকার সাথে সহজ যাতায়াতের জন্য শিনজিয়াংয়ের রুটকেই ব্যবহার করে চীন। অন্যদিকে সাংস্কৃতিক কারণেই যেহেতু উইঘুররা মূলধারায় মিশতে অনাগ্রহী, তাই তাদের স্বাজাত্যবোধের খুঁটিকে কোনো ধরনের ছাড় দিতে রাজি নয় চীন সরকার। তিব্বতের মতো কঠোর নজরদারি চালানো হয় এ প্রদেশেও। ফেইস ও ভয়েস রিকগনিশন, আইরিস স্ক্যানিং, ডিএনএ নমুনা ও থ্রিডি শনাক্তকরণ পদ্ধতিতে চালানো হয় এসব নজরদারি। স্বজাতির মধ্যে গুপ্তচরবৃত্তির কাজটি করে থাকে উইঘুরদের কেউ কেউই। কেউ ধূমপান বা মদ্যপান নতুন করে ছাড়লো কি না বা চীনা সংবাদ দেখে কি না- এসব পর্যন্ত নজরদারি করা হয়! সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে উইঘুরদের মতো হুইরা কখনো চীনা সরকারের উদ্বেগের কারণ হয়নি। হুই মুসলিমদের ঐ অর্থে রাজনীতিতেও বিশেষ আগ্রহ নেই। ঠিকঠাকভাবে ধর্ম পালন করতে পারলেই চলে তাদের! ফলে উইঘুরদের মতো রাষ্ট্রীয় রোষানলে পড়তে হয়নি হুই মুসলিমদের।(➤roar bangla)
.
 শিনজিয়াংয়ে উইঘুররা রোজা রাখতে পারেন না। কর্মক্ষেত্র ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উইঘুররা খাচ্ছেন কি না, সেটা প্রশাসনিকভাবে নিশ্চিত করা হয়! ওদিকে হুই মুসলিমরা ঠিকই রোজা রাখতে পারেন। উইঘুররা বিদেশ গমনের জন্য সহজে পাসপোর্টও পান না। সেখানে সৌদি আরবে হজ করতে যাওয়া হুই মুসলিমদের সংখ্যা বাড়ছে বছর বছর! মূলত শিনজিয়াং হচ্ছে তিব্বতের মত একটি স্বাধীনতাকামী এলাকা। যার অধিকাংশ জনসংখ্যাই উইঘুর মুসলিম। চীন সরকারের দাবি তারা বিচ্ছিন্নতাবাদী একটি ইসলামপন্থী গ্রুপের সন্ত্রাসী তৎপরতা মোকাবেলা করছে। তবে ঠিক কি কারনে তাদের উপর দমন-পীড়ন চালানো হচ্ছে কেউ বলতে পারে না। বেইজিং বলছে, উইঘুর মুসলিমদের কেউ কেউ জঙ্গি গ্রুপ ইসলামিক স্টেটে যোগ দিয়েছে। কিন্তু মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, সেখানকার লোকজনের ওপর চীনের দমন-পীড়নের কারণেই সেখানে সহিংসতার ঘটনা ঘটছে।
.
.
আসলে সমগ্র দুনিয়া ব্যাপী মুসলিম জাতিগোষ্ঠী হচ্ছে সবচেয়ে নির্যাতিত জাতি। কি ভারত, কি চীন, কি শ্রীলঙ্কা, কি মায়ানমার, কি ফিলিস্তিন.... এক কথায় সব। আর এসবের জন্য দায়ি কারা জানেন? আমরা মুসলিমরা! -- নিজেদের মাঝে কত ভাগ! হানাফি, সালাফি, হাম্বলী, শফিয়ী। এর চেয়েও বড় ভাগ শিয়া, সুন্নী..... আরো কত! আজ, এই বিভেদের জন্যই আজ আমরা নির্যাতিত জাতি। জানিনা কবে এই নির্যাতন শেষ হবে।
.
আল্লাহ বিশ্ব মুসলিমের উপর সমস্ত অত্যাচার বন্ধে মুসলিমদের পক্ষে গায়েবি সাহায্য দান করুক। আমিন।

Comments

Popular posts from this blog

DevSecOps - Beginners guide

The Cloud Is More Vulnerable Than You Think

DSA