সীমান্তে বাংলাদেশি হত্যা ও বাংলাদেশ সরকারের পদক্ষেপ

বাংলাদেশ ও ভারত বরাবরই নিজেদের বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে দাবি করে থাকে। এক্ষেত্রে উভয় দেশের সরকার প্রধানই জোরালো ভাবে এ দাবিটা করে থাকেন। কিন্তু বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে ভারতের ভূমিকা বরাবরই প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে, কারন সীমান্তে ভারতীয় বিএসএফ কতৃক অবাধে বাংলাদেশি হত্যা উভয় দেশের সম্পর্ক কেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে। গত ১০ বছরে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে প্রায় ৩০০ বাংলাদেশি নিহত হয়েছে। বন্ধুপ্রতিম দেশের প্রতি এরুপ আচরণ প্রশ্নই তুলবে। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কেন এই আগ্রাসী আচরণ? বিএসএফ এর দাবি তারা নাকি আত্মরক্ষার জন্যই গুলি করে, যা সম্পূর্ন মিথ্যা। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখাযায় সীমান্তবর্তী বাসিন্দারা তাদের গরু বা, ব্যাবসার পন্য আনতেই বর্ডারের অপর পাশে যায়। কিন্তু বিএসএফ তা না যাচাই করেই অত্যন্ত আগ্রাসী আচরণ করে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বর্ডারের ভেতর থেকে দেশের নাগরিককে তুলে নেয়ার ঘটনা ঘটেছে। আবার অনেক ক্ষেত্রেই তাদের সাথে তর্ক করার অপরাধে বাংলাদেশের নাগরিককে হত্যা করেছে। ঘটনাটা ঘটেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার তেলকুপি সীমান্তে। সেখানে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে এক বাংলাদেশি যুবক নিহত হয়েছেন। নিহত জাহাঙ্গীর (৪৫) শিবগঞ্জ উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের তেলকুপি গ্রামের আইনাল হকের ছেলে। স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, শনিবার সকাল ১০টার দিকে তেলকুপি সীমান্ত ফাঁড়িসংলগ্ন এলাকায় মাঠে পাখি ধরার জন্য অবস্থান করছিলেন জাহাঙ্গীর। এ সময় ভারতের চুরিঅনন্তপুর বিএসএফ ক্যাম্পের সদস্যরা তাকে জেরা করেন। জাহাঙ্গীর বার বার তাদেরকে পাখি শিকারের কথা বললেও বিএসএফ সদস্যরা তাকে চোরাকারবারি বলে সাব্যস্ত করছিলেন। এ নিয়ে তিনি বিএসএফ সদস্যদের সঙ্গে তর্কে জড়ালে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয় (https://bit.ly/2VTFBjS)। এটা বাংলাদেশের উপর ভারতের কর্তৃত্ববাদী মনোভাবের একটি বড় দৃষ্টান্ত। কিন্তু এরপরেও বাংলাদেশ সরকার এ ব্যাপারে প্রায় নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে।

আরো একটা ব্যাপার, সীমান্তে কিন্তু ভাগাভাগির একটি বিষয় আছে। বিএসএফকে বাংলাদেশকে খুশি করতে হয়। নাহলে সীমান্তবর্তী বাসিন্দাদের গুলি করা হয় (https://bit.ly/3iBqbuo)। তাহলে বিএসএফ যে দাবি করে, তারা আত্মরক্ষার জন্য গুলি করে, তবে সন্তুষ্টির কথা আসে কিভাবে? ইতিহাসের নজিরবিহীন হত্যাকাণ্ড ঘটে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে। ২০০৯ সালে সর্বোচ্চ সংখ্যক বাংলাদেশি হত্যা করেছিলো বিএসএফ। সংখ্যাটা হলো ৬৬। এছাড়াও ২০১০ সালে ৫৫ জন, ২০১১ সালে ২৪ জন, ২০১২ সালে ২৪ জন, ২০১৫ সালে ৩৮ জন, ২০১৬ সালে ২৫ জন, ২০১৭ সালে ১৭ জন, ২০১৮ সালে ১৪ জন, ২০১৯ সালে ৩৮ জন। আর ২০২০ সালের জন মাস পর্যন্ত ২৫ জন মানুষ হত্যা করেছে বিএসএফ(তথ্যঃ বিবিসি বাংলা)।   বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রের মানুষকে নির্দ্বিধায় হত্যা করাকি গভীর বন্ধুত্বের লক্ষন? উত্তরটা আমাদের কারোরই জানা নেই।

আরো দুঃখ জনক হলেও সত্য, এতসব মানুষ হত্যার পরেও আমাদের সরকার একপ্রকার নীরব ভূমিকা পালন করছে। আমাদের দেশে এটা যেন একটা স্বাভাবিক ব্যাপার। যেখানে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে একজন মানুষ ও সীমান্ত রক্ষী দ্বারা আক্রান্ত হলে সেটা ব্রেকিং নিউজ হয়ে যায়, আর আমাদের দেশে এটা যেন একটা স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকার কর্তৃক তেমন কোন ইফেক্টিভ পদক্ষেপই নেয়া হচ্ছে না। যেন একপ্রকার ঢোক গিলে বাধ্য হয়ে সয়ে যাচ্ছেন। এরুপ আচরণ সত্যিই দুঃখজনক। 

ফেলানি হত্যার পর ভারত অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছিলো, যে তারা আর সীমান্তে বাংলাদেশি হত্যা করবে না। কিন্তু তারা তাদের অঙ্গীকার রাখেনি। জুলাই মাসে ৩ দিনে ৭ বাংলাদেশি হত্যা  ইতিহাসে নজিরবিহীন হত্যাকাণ্ড (https://bit.ly/2Z8tnGl)। আরো দুঃখের ব্যাপার, সরকার এ ব্যাপারে ধরতে গেলে একবারেই নীরব ভূমিকা পালন করছেন। অনেক ক্ষেত্রে সরকার বিএসএফ এর পক্ষও নিয়েছেন (https://bit.ly/3f6l57b)। এর মূল কারন হিসেবে বলাহচ্ছে সরকারের নতজানু মনোভাব। ভারতের প্রতি সরকারের নির্ভরশীলতা একটি বড় কারন। নয়ত এই সীমান্ত হত্যা বন্ধে সরকার বহুবিধ পদক্ষেপ নিতে পারতো। আন্তর্জাতিক আদালত এর দারস্ত হতে পারতো। কিন্তু তা করা হয়নি। খালি সীমান্তে পতাকা বৈঠক করেই দায় সারা।

এই সীমান্ত হত্যা বন্ধে সরকারের একটি বড় পদক্ষেপ নেয়া অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। জানিনা কবে তারা এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিবেন।

Comments

Popular posts from this blog

Nest js

Malware Analysis

Internet Computer (ICP) - Blockchain