ঈদ উল আযহায় বিধর্মীদের প্রতি আমাদের আচরণ

#কুরবানির পশুর মাংস ফেসবুকে দিলে তেমন সমস্যা নেই। কেননা ছাগল, ভেড়া, উট!.... প্রভৃতিতে হয়ত কারো সমস্যা নেই।

কিন্তু, গরুর মাংস বা জবাই এর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে না দেয়াই ভালো। আমার মনে হয় যেটা। অন্য ধর্মে আমরা বিশ্বাস করিনা। কিন্তু মানুষ গুলোকে তো সম্মান করতে পারি! তাই না?

আমি ভারতে হিন্দু কর্তৃক মুসলিম নির্যাতনের কট্টর প্রতিবাদ করি দেখে অনেকেই বলে "তারেক হিন্দু বিদ্বেষী "। যা একেবারেই ভুল। আমার জীবনের সবচেয়ে প্রিয় দুইজন শিক্ষকের একজন হলেন হিন্দু। স্যার আমাকে প্রচন্ড স্নেহ করতেন। স্যারের বুঝানোর ক্যাপাসিটি খুব সুন্দর ছিলো। এরপর আমার কলেজের সাবেক প্রিন্সিপাল ফাদার থাদিউস। উনি একজন খৃষ্টান পাদ্রী। আর আমিই নাকি বিধর্মীদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করি। হ্যা, এটা সত্য আমি নাস্তিক দের ঘৃণা করি।

যাক। আমাকে নিয়ে কে কি ভাবে, তা নিয়ে আমি খুব একটা মাথা ঘামাই না। কথা হচ্ছে, বিধর্মীদের প্রতি সম্মান রাখা আমাদের অবশ্য কর্তব্য। তারা তো আমাদেরই স্বজাতি। আমাদের ভাই। আমরা বাঙালি। হয়ত তারা তেমন কিছু বলবেও না। কিন্তু, মানুষ গুলোকে সম্মান দেখাতে তো সমস্যা নেই। আর মুসলিমের ব্যাবহার কেমন সেটা হাদিস ঘাটুন, খুব সুন্দর করে উত্তর পেয়ে যাবেন। ইসলামে বিধর্মীদের প্রতি সদয় সুন্দর ব্যাবহারের বিধান রয়েছে। পবিত্র কোরআনে #আল্লাহ পাক বলেন "যারা ধর্মের ব্যাপারে তোমাদের সাথে যুদ্ধরত নয় এবং মাতৃভূমি থেকে তোমাদেরকে বহিষ্কার করেনি তাদের সাথে দয়া ও ন্যায়বিচারের ব্যবহার করতে আল্লাহ তোমাদের নিষেধ করেন না। " (সুরা মুমতাহিনা-৮)

আমাদের নবিজী (সাঃ) বিধর্মীদের প্রতি অনেক ভালো ব্যাবহার করতেন। তার অনেক ঘটনা আছে। তার মাঝে একটি হলো -- মহানবী (স.) একদিন মসজিদে নববিতে কতিপয় সাহাবিকে নিয়ে আলোচনা করছিলেন। এমন সময় একজন অমুসলিম বেদুইন এসে মসজিদের এক কোনে প্রস্রাব করছিলো। সাহাবিরা তাকে মারতে উদ্যত হলে মহানবী (স.) তাদের নিবৃত্ত করলেন। প্রস্রাব করা শেষ হলে তিনি ওই বেদুইনকে বুঝিয়ে বললেন, ‘এটা মুসলিমদের ইবাদতখানা, প্রস্রাবের স্থান নয়।’ এ কথা বলে তিনি তাকে বিদায় দিয়ে সাথীদের নিয়ে মসজিদের প্রস্রাব ধুয়ে দিলেন। কুরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমার ধর্মের বিরুদ্ধে যারা যুদ্ধ করেনি, বসতি থেকে তোমাকে উচ্ছেদ করেনি, তাদের প্রতি তোমার দয়ালু হওয়া উচিৎ। আর তাদের সাথে ন্যায়ানুগ আচরণ কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ ন্যায় ভালোবাসেন।’ (৬০: ৮)

সাহাবায়ে কেরাম দেরও বিধর্মীদের প্রতি সদয় আচরণের অনেক নজির আছে। তার মাঝে একটি হলো---

>>ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর (রা.)-এর খেলাফতকালে যখন মিসরের শাসনকর্তা হিসেবে হযরত আমর ইবনুল আস (রা.) দায়িত্ব পালন করছিলেন, সে সময় একদিন আলেকজান্দ্রিয়ার খ্রীস্টান পল্লিতে হৈচৈ পড়ে গেলো। কেউ একজন যিশু খ্রিস্টের প্রস্তরনির্মিত মূর্তির নাক ভেঙ্গে ফেলছে। খ্রিস্টানরা ধরে নিল, এটা মুসলিমদের কাজ। তারা উত্তেজিত হয়ে উঠলো। খ্রিস্টান বিশপ অভিযোগ নিয়ে আসলেন আমর ইবনুল আস’র কাছে। আমর শুনে অত্যন্ত দুঃখিত হলেন। তিনি ক্ষতিপূরণ স্বরূপ মূর্তিটি নতুনভাবে তৈরি করে দিতে চাইলেন। কিন্তু খ্রিস্টান নেতাদের প্রতিশোধ স্পৃহা ছিলো অন্যরকম। তারা চাইলো, মুহাম্মদ (সা.)-এর মূর্তি তৈরি করে অনুরূপভাবে নাক ভেঙ্গে দিতে। খ্রিস্টানদের এ মতামত ব্যক্ত করার মধ্যে দিয়ে যে ঔদ্ধত্য প্রকাশ পেয়েছে, তাতে তাদের কতটুকু ধর্মীয় স্বাধীনতা ছিলো তার প্রমাণ পাওয়া যায়।

যে নবী (স.) আজীবন পৌত্তলিকতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন, সে নবীর মূর্তি তৈরিকে মুসলিমরা মেনে নিতে পারেনি। হযরত আমর কিছুক্ষণ নীরব থেকে খ্রিস্টান বিশপকে বললেন, ‘আমার অনুরোধ, এ প্রস্তাব ছাড়া অন্য যে কোনো প্রস্তাব করুন আমি রাজি আছি। আমাদের যে কোন একজনের নাক কেটে আমি আপনাদের দিতে প্রস্তুত, যার নাক আপনারা চান।’

খ্রিষ্টান নেতারা সবাই এ প্রস্তাবে সম্মত হলো। পরদিন খ্রিষ্টান ও মুসলিমরা বিরাট এক ময়দানে জমায়েত হলো। মিসরের শাসক সেনাপতি আমর (রা.) সবার সামনে হাজির হয়ে বিশপকে বললেন, ‘এদেশ শাসনের দায়িত্ব আমার। যে অপমান আজ আপনাদের, তাতে আমার শাসনের দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে। তাই তরবারী গ্রহণ করুন এবং আপনিই আমার নাক কেটে দিন।’ একথা বলেই তিনি বিশপকে একখানি ধারালো তরবারী হাতে দিলেন। জনতা স্তব্ধ দাঁড়িয়ে আছে, খ্রিস্টানরা স্থম্ভিত। চারদিকে থমথমে ভাব। সে নীরবতায় নিঃশ্বাসের শব্দ করতেও যেন ভয় হয়। সহসা সেই নীরবতা ভঙ্গ করে একজন মুসলিম সৈন্য এগিয়ে এলো। চিৎকার করে বললো, ‘আমিই দোষী, সিপাহসালারের কোন অপরাধ নেই। আমিই মূর্তির নাক ভেঙ্গেছি। এই যে, তা আমার হাতেই আছে। তবে মূর্তি ভাঙ্গার কোন ইচ্ছা আমার ছিলোনা। মূর্তির মাথায় বসা একটি পাখির দিকে তীর নিক্ষেপ করতে গিয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।’

সৈন্যটি এগিয়ে এসে বিশপের তরবারীর নীচে নিজের নাক পেতে দিলো। স্তম্ভিত বিশপ। নির্বাক সবাই। বিশপের অন্তরাত্মা রোমাঞ্চিত হয়ে উঠলো। তরবারী ছুঁড়ে দিয়ে বিশপ বললেন, ‘ধন্য সেনাপতি, ধন্য এই বীর সৈনিক, আর ধন্য আপনাদের মুহাম্মদ (স.), যার মহান আদর্শে আপনাদের মতো মহৎ উদার নির্ভিক ও শক্তিমান মানুষ তৈরি হয়েছে। যিশু খ্রিস্টের প্রতিমূর্তির অসম্মান করা হয়েছে সন্দেহ নেই, কিন্তু তার চাইতেও অন্যায় হবে যদি অঙ্গহানি করি। সেই মহান ও আদর্শ নবীকেও আমার সালাম জানাই।’ জলন্ত এই উদাহরণ আজো বিশ্ববাসীকে অবাক করে।

হযরত আলী (রা.) যখন মুসলিম জাহানের শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত, সে সময়ে একবার তার ঢাল চুরি হলো। চুরি করলো একজন ইহুদি। হযরত আলী (রা.) আদালতের শরণাপন্ন হলেন। কাজী (বিচারপতি) খলিফা হযরত আলী (রা.) এর কাছে সাক্ষী চাইলেন। সাক্ষী হিসেবে খলিফা হাজির করলেন তার এক ছেলে এবং চাকরকে। কিন্তু আইনের দৃষ্টিতে আপন সন্তান ও চাকরের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নয় বিধায় কাজী খলিফার অভিযোগ নাকচ করে দিলেন। মুসলিম জাহানের অধিপতি হয়েও তিনি কোন বিশেষ বিবেচনা পেলেন না। ইসলামী আইনে শাসক-শাসিত, উঁচু-নীচু, শত্রু-মিত্র সকলেই সমান। ইহুদি বিচার দেখে অবাক বিস্ময়ে বলে উঠলো, ‘অপূর্ব এই বিচার, ধন্য সেই বিধান যা খলিফাকে পর্যন্ত খাতির করেনা আর ধন্য সেই নবী যার প্রেরণায় এরূপ মহৎ ও ন্যায়নিষ্ঠ জীবনের সৃষ্টি হতে পারে। হে খলিফাতুল মুসলিমীন, ঢালাটি সত্যই আপনার। আমিই তো চুরি করেছিলাম। এই নিন আপনার ঢাল। শুধু ঢাল নয় তার সাথে আমার জান-মাল, আমার সবকিছু ইসলামের খেদমতে পেশ করলাম।” 

ইসলামের মহানুভবতা বলে শেষ করা যাবে না। কিন্তু, আক্ষেপ, সেই মহানুভবতা আর আমাদের মাঝে নেই। যাই হোক, সকল বিধান মান্য করে সকলের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে তবেই আমি-আপনি আমরা মুসলিম। 

  • আল্লাহ আমাদের ত্যাগকে কবুল করে নিন, আমিন।

Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

Nest js

Malware Analysis

Internet Computer (ICP) - Blockchain