সেপ্টেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয় সমুহ খুলে দেয়াটা আদতে কতটা যৌক্তিক?

 করোনার করাল গ্রাসের শিকার বাংলাদেশের শিক্ষার খাত। সেই মার্চ মাস হতে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। অপর দিকে সময়ের সাথে সাথে দেশের সব কিছু খুলে দেয়া হলেও বন্ধ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এর কারন হিসেবে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকির কথা বলা হয়েছে। আসলে এই সিদ্ধান্ত কে আমিও সমর্থন করি। কেননা আমরা যতই স্বাস্থ্য বিধির কথা বলি না কেন, সেটা আসলে অতটাও মানা হয় না , যতটা প্রয়োজন। চাইলেও মানা হয় না। মানুষের স্বভাবগত বৈশিষ্ট্যের জন্যই মানুষ মানতে পারে না। এরই মাঝে বিভিন্ন গনমাধ্যমের বরাতে জানতে পারছি সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি অথবা শেষ দিকে হয়তোবা বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়া হতে পারে বলে প্রাথমিক ভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে । ধারনা করা হচ্ছে ঐ সময় নাকি বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিত স্বাভাবিক হয়ে আসবে। আর এই সংবাদ শোনার পর অনেক শিক্ষার্থীদের মাঝেই চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে!

কেননা,

বর্তমানে বাংলাদেশে সরকারি হিসেবে করোনা আক্রান্তের মোট সংখ্যা ২৭১৮৮১ জন। মোট মৃত্যু ৩৫৯১ জন । যা বর্ধনশীল। এরই মাঝে দেশের স্বনামধন্য বহু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মৃত্যু বরন করেছেন। যেমন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শাকিল উদ্দিন আহমেদ মারা গেছেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) গণিত বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক শফিউল আলম তরফদার বৃহস্পতিবার একটি হাসপাতালে মারা গেছেন, এছাড়াও ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য নাজমুল করিম চৌধুরী মারা গেছেন এই করোনায় আক্রান্ত হয়ে। আর পরিস্থিতি স্বাভাবিক বলে চালিয়ে দিয়ে ভ্যাক্সিন আসার আগে যদি বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়া হয় তবে পরিস্থিতি সত্যি বলতে আরো খারাপ হবে। আক্রান্তের সংখ্যা যতটা বাড়বে সেটা ধারনার বাইরে।

আমরা যতই স্বাস্থ্য বিধি মেনে ক্লাস নেয়ার কথা বলি না কেন, সে বিধি নিষেধের মাঝে আসলে একটা ফাঁকফোকর থেকেই যায়। বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যায়ের প্রায় সব গুলোতেই হল রয়েছে। প্রায়ভেটেও প্রায় অনেক গুলোতে হল রয়েছে। হয়তোবা সবাই হলে থাকে না। কিন্তু হিসেব করলে দেখা যাবে, যে সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে হল রয়েছে সে গুলোর প্রায় অধিকাংশ শিক্ষার্থীই হলে থাকেন। এমতাবস্থায় ক্লাসরুম গুলোতে হয়তোবা স্বাস্থ্যবিধি দেখানো যেতে পারে, কিন্তু হল গুলোতে কি হবে? আর অনেক শিক্ষার্থীই হলের বাইরে মেসে থাকেন। সে ক্ষেত্রে তাদের মেস গুলোতে আদতে কতটা স্বাস্থ্য বিধি মানা হয় সেটাও দেখার বিষয়। তারা আসলে চাইলেও কতটা মানতে পারে সেটাও দেখতে হবে। কারন বাইরের মেস গুলোতে যারা থাকেন তাদের সবাই কিন্তু শিক্ষার্থীনা। আর সেশন জট কাটিয়ে উঠার জন্য বর্তমানে দেশে অনলাইন ক্লাস তো চলছেই। চলতি মাসের ২৩ তারিখ থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোতেও পুরোদমে অনলাইন ক্লাস শুরু হবে। অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে পরীক্ষাও নিচ্ছে। আর তাই সেশন জটের কতটা শঙ্কা আদতে কতটা থাকে তা আমার জানা নেই।

আমার মনে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হচ্ছে এটা, যে ক্লাস চলাকালীন সময় না হয় প্রশাসন কঠোর ভাবে স্বাস্থ্য বিধি প্রয়োগ করলো। কিন্তু ক্লাসের পর ক্লাস রুমের বাইরে কি হবে? হল গুলোর অবস্থাই বা কি হবে? আর আক্রান্ত হলে প্রশাসন সেটাকে কিভাবে হ্যান্ডেল করবে? পর্যাপ্ত চিকিৎসা সেবা দিতে পারবে তো?

একটা ব্যাপার কি, বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়া হলে লাভ যতটা হবে, ক্ষতি তার চেয়েও বেশি হবে। সেখানে যদি কোন ভাবে একজন শিক্ষার্থীও আক্রান্ত হয়, তবে তার মাধ্যমে একটা বিশাল সংখ্যা এই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়ে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে। আর যদি সেটা ঘটেও যায়, তবে এর প্রকোপের মুখে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষকরাও পড়বেন। আর আক্রান্ত হওয়া শুরু হলে আসলে সেটা আটকানো কঠিন হয়ে যাবে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে এটাই বাস্তবতা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্কুল খোলার তোড়জোরে ১৭ দিনে মোট ১ লাখ শিক্ষার্থী করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। যা দ্রুততার সাথে বাড়ছে। যেখানে খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই অবস্থা সেখানে আমাদের অবস্থা তো আরো খারাপ হবে।

আর তাই আমার কাছে ভ্যাক্সিন আসার পরই বিশ্ববিদ্যালয় সহ যাবতীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলাটা যৌক্তিক মনে হয়। এর আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়াটা শিক্ষক - শিক্ষার্থীদের মৃত্যু মুখে ঠেলে দেয়ার শামিল। অনেকেই বলবে, সব তো চলছেই, তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চললে সমস্যা কোথায়!? - আমি বলবো ব্যাবসাপ্রতিষ্ঠান আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দুটো দুই জিনিস। দুটো ব্যাপারকে এক সাথে গোলাতে যাবেন না। তাহলে এর উত্তর পেয়ে যাবেন। আর আপনাদের ধারনাও পরিষ্কার হয়ে যাবে।

পরিশেষে একটা কথাই বলবো। এই পেন্ডেমিক সিচুয়েশনে বিশ্ববিদ্যালয় সহ যবাতীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের জন্য না খুলে দেয়াটাই আমার কাছে সঠিক সিদ্ধান্ত বলে মনে হচ্ছে। দেশে ভ্যাক্সিন আসার পরই শিক্ষার্থীদের শারীরিক ভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়ে যাওয়া উচিত। তার আগে ভার্চুয়ালি কার্যক্রম চালিয়ে নেয়াটাকেই আমার কাছে সঠিক সিদ্ধান্ত বলে মনে হয়।

Comments

Popular posts from this blog

Nest js

Malware Analysis

Internet Computer (ICP) - Blockchain