আমার ধর্ষিতা স্বাধীন বাংলা

চারিদিকে শুধু ধর্ষণ! বাসে ধর্ষণ, এদিকে, সেদিকে- সব জায়গায়। খবর গুলোতে যেন ধর্ষণের সংবাদ দেয়াটা একটা রুটিনের মত হয়ে গেছে। আর হবেই না বা কেন? দেশেও যে রুটিন করে ধর্ষণ হচ্ছে! এ যেন এক মহামারী। এই ২০২০ সালে ১৪ দিনে ১৩টি ধর্ষণ হয়েছে! ভাবা যায়? এই নতুন সরকার গঠনের পর নজীর বিহীন ভাবে ধর্ষণ হচ্ছে। এর মূল কারন হচ্ছে আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ নেই।
.
আমি যখন ছোট ছিলাম। মানে ৬ষ্ট কি ৭ম শ্রেণীতে পড়তাম, তখন ছিলো আওয়ামী শাসনামলের শুরু। মানে ২০১০-২০১১ এর দিকে। তখন খবরের কাগজ গুলোতে দেখতাম আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র গুলোর সব ভয়াবহ ঘটনা। সেগুলা ছিলো ভারতে। কিন্তু যুগের বিবর্তনে সেই সব কুকর্ম গুলো বর্ডার পার করে আমার দেশেও যে এভাবে হানা দিবে! ভাবতে পারিনি কখনো।
.
দেশে অনেক কিছুই হচ্ছে। উন্নত সামরিক সরঞ্জাম দিয়ে সসজ্জিত হচ্ছে আমাদের সামরিক বাহিনী। পুলিশের সুযোগ সুবিধা বাড়ছে দিনকে দিন। এক কথায় সব কিছুই হচ্ছে। কিন্তু হচ্ছে না আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ। সবাই যে টাকার কাছে জিম্মি। টাকার পর আসে বাবা-চাচা-মামা এবং সর্বনিম্ন হচ্ছে নিকট আত্মীয়। কাজ শেষে কোন ভাবে যদি একটা ফোন দেয়া যায়.... তবেই কিল্লাফতে। আরো দুঃখজনক ব্যাপার হলো, ধর্ষণের পর সেই ধর্ষণ ঘটনা নিয়ে হাজারো নাটক, হাজারো রাজনীতি, আলোচনা, তর্কবিতর্ক! - কেউ বলে "সে ধর্ষক নয়! হতে পারে না।" - আবার কেউ বলে "আরে না। সে ই ধর্ষক।" - এখন, মানুষের আইনের প্রতি আস্থা এতটাই কমেছে যে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী যাই করুক, তা নাটক বলে মনে হয়।
.
হবে না ই বা কেন? বিশ্বজিৎ এর মত অনেক ঘটনা আমাদের মন পরিবর্তন করতে বাধ্য করেছে। - আর ধর্ষণ! - আচ্ছা, বলুন তো? দেশে কয়টা ধর্ষণ মামলার বিচার হয়েছে? - যেখানে, বাবা বিচার চাইতে যাওয়ায় উল্টো বাবাকেই আসামি বানিয়ে দেয়া হয়। সেখানে আইনের অবস্থা কেমন, তা তো বুঝাই যাচ্ছে।
.
মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সলিশ কেন্দ্র (আসক) এর হিসাব অনুযায়ী, ২০১৯ সালে এক হাজার ৪১৩জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন৷ ২০১৮ সালে এই সংখ্যা ছিলো ৭৩২জন৷ অর্থাৎ, গত বছরের তুলনায় ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে দ্বিগুণ যা ভয়াবহ বলে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি৷ ২০১৭ সালে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৮১৮ জন নারী৷ এদিকে ২০১৯ সালে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৭৬জনকে৷ আর আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন ১০জন নারী৷ নারীর প্রতি সহিংসতার অন্য চিত্রগুলোও ভয়াবহ৷ ২০১৯ সালে যৌন হয়ানারীর শিকার হয়েছেন ২৫৮ জন নারী৷ ২০১৮ সালে এই সংখ্যা ছিলো ১৭০ জন৷ ২০১৯ যৌন হয়রানীর শিকার ১৮ জন নারী আত্মহত্যা করেছেন৷ প্রতিবাদ করতে গিয়ে চারজন নারীসহ ১৭ জন হত্যার শিকার হয়েছেন৷ যৌন হয়রানীর প্রতিবাদ করতে গিয়ে ৪৪ পুরুষ নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। আর সবশেষ ২০২০ তে বিগত ১৪ দিনে ১৩টি ধর্ষণ। সর্বশেষ ধর্ষণ হয়েছে কুমিল্লায়। স্নাতক ১ম বর্ষের ছাত্রী কে ধর্ষণের পর হত্যা। -- প্রশ্ন হলো, বিচার হয়েছে কয়টির? ২০২০  এরটা না হয় ধরে নিলাম আইনের প্রক্রিয়া চলমান। কিন্তু, বিগত বছরগুলোর কয়টারই বা বিচার হয়েছে?
.
উত্তরঃ একটারও না। মুষ্টিমেয় কিছু লোক দেখানো বিচার যাও হয়েছে। পরবর্তীতে পরিবেশ ঠান্ডা হওয়ার পর সে সকল মামলার আসামি গুলো জামিনে বাইরে।
.
দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সবচেয়ে বাজে দিক হলো, আইন প্রয়োগে তারা রাজনৈতিক সমর্থন কে আগে প্রাধান্য দেয়। মানে তারা দেখে যে অপরাধীর  Political View কি! - যদি তা হয় সরকার সমর্থিত, তবে তার সাত খুন মাফ। আর যদি তা হয় সরকারের বিরোধী দলের সমর্থিত.... তবে তো কথাই নেই! আগে অস্তিত্ব বিলীন হবে, তারপর অন্য কথা। এর মূল কারন হচ্ছে, দেশের আইন বিভাগ সরকারের হাতে। সরকার যেভাবে চালায়, আইন বিভাগ সেভাবেই চলে।
.
যেদিন আইন বিভাগ স্বাধীন হবে, সেদিন আশা করা যায়, দেশে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা হলেও হতে পারে। -- সেই দিন কবে আসবে? - কেউ কি বলতে পারেন, সেই দিন কবে আসবে?......

Comments

Popular posts from this blog

Nest js

Malware Analysis

Internet Computer (ICP) - Blockchain